লক্ষ্মীপুরে ধর্ষণ অভিযোগ
ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে
সোহেল হোসেন লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।
লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলাতে ২নং উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বতর্মান ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন ছৈয়্যালের বিরুদ্ধে দুই সন্তানের জননীকে বিচারের কথা বলে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ চেষ্টা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
গত ৩ জুলাই ২০২২ইং তারিখ সকাল বেলা উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের, ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী মোঃ হারুন এর মেয়ে দুই সন্তানের জননী মোসাম্মাৎ আমেনা বেগম ওরপে লিপি (২২) কে তার স্বামীর সাথে বিরোধের বিচারের বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিবে বলে সকাল বেলা ঐ ওয়ার্ডের মেম্বার মহিউদ্দিন ছৈয়্যাল তার নিজের রুমে দেখা করতে বলে। সেখানে দেখা করতে গেলে আমেনা বেগম ওরপে লিপি কে একা পেয়ে ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন ছৈয়্যাল ধর্ষণ চেষ্টা চালায়।
এই বিষয়ে ভিকটিম আমেনা বেগম ওরপে লিপি এই প্রতিবেদক কে জানান, “আমার স্বামী রাজন হোসেন আমাকে মারধর করে, আমাকে প্রতিনিয়ত অত্যাচার করে। আমি দুই সন্তান নিয়ে নিরুপায় হয়ে গত ২ জুলাই মহিউদ্দিন ছৈয়্যালের কাছে বিষয়টি জানাই। সে আমাকে হাজিমারা পুলিশ ফাঁরি থানায় একটা অভিযোগ করতে বলে। আমি তার কথা মত অভিযোগ করে আসি। তারপর মেম্বার আমাকে বলে, সবকথা তো তোর বাবার সামনে বলা যাবে না। তুই কাল তিন তারিখ সকালে আমার সঙ্গে একা দেখা করিস। তোকে স্বামীর বিচারের বিষয় একটা পরামর্শ দেব। আমি মেম্বারের কথা বুঝতে পারিনি, সকালে বাবাকে বলছি বাবা মেম্বার কী বলতে চায় সেজন্য আমাকে ডাকছে আমি কী যাব? বাবা বলছে কী বলে শুনে তাড়াতাড়ি আসিস। আমি ৩ জুলাই সকাল বেলা মেম্বারের বাড়িতে যাই, মেম্বার তখন ফজরের নামাজ পড়ে আসতেছে। আমাকে পথে দেখেই সোজা তার শোয়ার রুমে নিয়ে যায়। আমি মেম্বারকে বলি কী বলবেন বলেন? মেম্বার কিছু না বলেই সরাসরি আমার বুকে হাত দেয়। আমার ইজ্জত নষ্ট করার চেষ্টা করে। তখন আমি বলি আমি তো এই চরিত্রের লোক না। আপনি আমাকে বিচারের বিষয় কী বলবেন তা না বলে এসব করছেন কেন? আমি বাড়িতে গিয়ে বাবা মা সহ এলাকাবাসির সবাইকে বলে দেব। তখন মেম্বার আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে কাউকে কিছু বলিসনা। আমি সুযোগ পেয়ে সোজা বাড়িতে দৌড়ে আসি। আব্বাকে বলার পর আব্বা প্রথমে স্থানীয় স্যার ব্যবসায়ী ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ এর সভাপতি রুহুল আমীনকে জানান, পরে চেয়ারম্যান আবুল হোসেনকে জানান, চেয়ারম্যান বিচার করার কথা বলে দুদিন ঘুরিয়ে এখন পযর্ন্ত কোন বিচার করেনি। সে কোন বিচার করবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হয়েছে। এখন সবাই আমাকে নিন্দা দিচ্ছে। আমার স্বামীও বিষয়টি জানছে হয়তো এজন্য আমার স্বামী আর কোনদিন আমাকে গ্রহণ করে কিনা জানিনা। আমি এখন দুটি সন্তান নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? আমার এখন মরা ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। আমি প্রশাসনের কাছে মহিউদ্দিন ছৈয়্যালের উপযুক্ত বিচার দাবী করছি। আমেনার বাবা মোঃ হারুন বলেন,” আমার মেয়ের জামাই প্রায়ই আমাদের বাড়িতে থাকে। জামাই কোন কাজকর্ম করেনা। অনেক খারাপ। শ্বশুর বাড়িতে গেলেই মেয়েকে মারধর করে। এ বিষয় নিয়ে মেম্বারের কাছে আমরা যাই। মেম্বারসহ আমাদের সাথে গিয়ে হাজিমারা ফাঁড়ি থানায় একটা অভিযোগ করি। মেম্বার পরেরদিন আমার মেয়ে আমেনা বেগম লিপিকে তার বাড়িতে বিচারের বিষয়ে কী পরামর্শ দিবে বলে দেখা করতে ডাকে। মেয়ে সেখানে গেলে মেম্বার আমার সহজ সরল মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করতে চেষ্টা করে। মেয়ে সুযোগ বুঝে ছূটে এসে বাড়িতে কান্নাকাটি করে বলে। আমি মেম্বারকে ফোন দেই সে ফোন রিসিভ করেনি। ডাকলেও মেম্বার আর আমার সঙ্গে দেখা করেনি। আমি স্থানীয় স্যার ব্যবসায়ী রুহুল আমীনকে নিয়ে চেয়ারম্যান আবুল হোসেন এবং আলতাফ মাস্টারকে বিষয়টি জানিয়ে বিচারের দাবী জানাই। আলতাফ মাস্টার এবং চেয়ারম্যান প্রথমে বিচার করবে বলে, আমাদেরকে দুদিন ঘুরিয়ে এখন বলছে কীসের বিচার করব? আমরা গরীব তাই কেউ আমাদের পক্ষে কথা বলছেনা। কোথাও গিয়ে আমরা বিচার পাচ্ছি না। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে এর উপযুক্ত বিচার চাই। ”
আমেনা বেগমের মা বলেন,” আমার মেয়ে আমেনা বেগম লিপিকে কথা শুনতে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন ছৈয়্যাল ইজ্জত নষ্ট করে। তার গায়ে হাত দেয়। জোরজবরদস্তি করে। মেয়ে সুযোগ পেয়ে চলে এসে আমাদেরকে জানায়। আমরা চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়েছি সে বিচার করবেনা বলেছে। আমরা গরীব বলে কোথাও গিয়ে বিচার পাচ্ছি না। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে মেম্বার মহিউদ্দিন ছৈয়্যালের উপযুক্ত বিচার চাই। ”
এই বিষয়ে ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন ছৈয়্যালকে জানতে চাইলে, ” তিনি বলেন, মেয়ে
আমার কাছে আসছিল সেটা সত্য। তবে আমার উপর যে ইজ্জত নষ্ট করার অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। আমার বিরোধী দলের রুহুল আমীনসহ কিছু লোকজন আমার উপর বানোয়াট মিথ্যা রটনা করছে।”
বিষয়টি নিয়ে ৫নং ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ এর ওয়ার্ড সভাপতি রুহুল আমীন কে জানতে চাইলে,”তিনি বলেন, মেয়ে, মেয়ের বাবা আমার কাছে মহিউদ্দিন ছৈয়্যালের বিষয়টি জানিয়েছে। আমেনা আক্তার লিপি ও তার বাবা বলছে, মহিউদ্দিন ছৈয়্যাল মেয়ের বুকে হাত দিয়েছে, ধস্তাধস্তি করে ধর্ষণের চেষ্টা করছে তবে ধর্ষণ করতে পারেনি। আমি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করতে বলেছি। তারা চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়েছে। বিচার না করলে আমার তো কিছু করার নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা কেন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট রটনা করব? তার বিরুদ্ধে এরকম আরও বহু অপকর্মের অভিযোগ আছে কেউ মুখ খুলছেনা। কিন্তু আমার কাছে এসে বলে। সেগুলোও কী আমরা রটনা করছি।