কালামরা ভয়ঙ্কর বড় মাপের প্রতারক।
ক্রাইম রিপোর্টার
হাজার টাকা নয়, তা আবার কোন ধনীর টাকাও নয়, গরিব অসহায়দের ২১ লাখ ৮১ হাজার ৩৯২ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে অতিথি কর্মজীবী সমবায় সমিতির তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। প্রধান অভিযুক্ত সমবায় সমিতির সম্পাদক মো. আব্দুল কালাম। তিনি কোন সাধারণ ব্যক্তি নন, তিনি অর্থ আত্মসাতের মাফিয়া। তার নেতৃত্বেই সংগঠনের ভিতর গড়ে উঠেছে বিশাল প্রতারক চক্রের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের অপর দুই সদস্য হলেন, অর্থ সম্পাদক মো. ফজলুল হক কালু (৪৪) ও সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্ল্যাহ (৩৯)। চাকরি পাবেন-এমন লেখাপড়াও ছিল না এই আব্দুল কালামের। তারপরও তিনি চট্টগ্রাম সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতালের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদের ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত আছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে সরকারি নীতিমালায়
ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ চাওয়া হলেও তিনি কিভাবে রেলওয়ে হাসপাতালের ড্রাইভার নিয়োগ পেয়েছেন। এই কথাগুলো বলছিলেন সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা।
খোলস পাল্টাতে পটু এই আব্দুল কালাম। তার গায়ের পোশাক দেখে বলার সুযোগ নেই তিনি লাখ টাকার প্রতারক। মনে হবে তিনি রেলওয়ে স্টেশনের একজন ভিক্ষুক। ময়লাযুক্ত ছেঁড়া শার্ট ও লুঙ্গিই তার নিত্যদিনের পোশাক। কিন্তু আসলে তিনি অনেক বড় মাপের একজন মাফিয়া। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাওয়া, তার গ্রামের বাড়িতে একাধিক জমিজ সম্পত্তি কেনা, মামলা পরিচালনা করা তার অপকর্মের প্রভাবিত উদাহরণ। নয়তো একজন ড্রাইভারের বেতনে পরিবারের ভরণ পোষণের পর মামলা পরিচালনা করা অসম্ভবনীয়। এমনটাই দাবি মামলার বাদীর।
গোপন সূত্রে জানা যায়, ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় তার পরিচয়ও ভিন্ন ভিন্ন। চকবাজার ও আকবর শাহ থানা এলাকায় তিনি মাদক ব্যবসায়ী হিসেবেও খুব পরিচিত। বাকলিয়ায় তিনি কিশোর গ্যাং লিডার, সিআরবিতে প্রভাবশালী অভিভাবক এবং সিলেটে তিনি অস্ত্রের চোরাচালান ব্যবসায়ী। এখানেই শেষ নয়, একাধিক পতিতালয়ের তিনি পরিচালকও বটে। সিলেট তার নিজ এলাকাতেও তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের নানা অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের এক সদস্য বলেন, আব্দুল কালামের সাথে বিগত দিনগুলোতে বন্ধুর মতোই চলাফেরা করেছি। কিন্তু ঘনিষ্ঠ হওয়ার এক পর্যায়ে জানতে পারি তিনি মাদক কারবারির সাথে জড়িত। তার জীবিকার প্রধান অর্থই মাদক থেকে আসে। আমি অনুধাবন করতে পেরে তার কাছ থেকে দূরে সরে যাই। তার কিছুদিন পরই শুনি আমাদের অফিসের সকল আসবাবপত্র বিক্রি করে তিনি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমি অতি বিলম্বে এই প্রতারকের গ্রেফতার দাবি করছি।
তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একবার তিনি তার গ্রামের বাড়িতে কোন এক পতিতালয়ের পাশে নোংরা কাজে ধরা পড়ে জনগণের গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন। তখন তাকে সপ্তাহ খানেক হাসপাতালের বেডে পড়ে থাকতে হয়েছে। এরপর তাকে ওই মেয়ের সাথে বিবাহে আবদ্ধ করা হয়। বর্তমানে তার একটি সাত বছরের কন্যা সন্তানও রয়েছে।
জানা গেছে, অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই কালাম তার পূর্ব পরিচিতদের নিয়ে গঠন করেছিলেন অথিতি কর্মজীবী সমবায় সমিতি। কিন্তু সমিতির সদস্যদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এখন তিনি সমাজের ধনী ব্যক্তি।
আরও জানা যায়, সমিতির অর্থ আত্মসাত করেই ক্ষান্ত হননি তারা। তারা সমিতি কার্যালয়ের আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্রও সরিয়ে বিক্রি করে দেন এবং কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেন।
মামলার বাদী ও অথিতি কর্মজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. অলি উদ্দিন হাওলাদার ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি মেট্র্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ১ম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শহিদুল ইসলাম ২০২০ সালের ১৩ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ সত্যতা পাওয়ায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি (এসআই) উল্লেখ করেন, অথিতি কর্মজীবী সমবায় সমিতির সম্পাদক মো. আব্দুল কালাম, অর্থ সম্পাদক মো. ফজলুল হক কালু ও সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্ল্যাহ সমিতির কোনো হিসাব না দিয়ে ২১ লাখ ৮১ হাজার ৩৯২ টাকা আত্মসাত করেন এবং সমিতির মূল্যবান মালামাল ও কাগজপত্র নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল হেলাল বলেন, আমার মক্কেল মো. অলি উদ্দিন হাওলাদার একটি সি আর মামলা করেন মামলা নাম্বার ১১১/২০২০ মামলাটি ০২/০৩/২০২১ তারিখ ধার্য তারিখ ছিলো। হাজিরা শেষে কোট বিল্ডিং মসজিদের পাশে দিয়ে ত্যাগ করার সময় আমার মক্কেল কে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি ও থাপ্পর কিল ঘুষি লাথি ও মারে। আমার মক্কেল বিষয়টি আমাকে অবহিত করলে আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় অবহিত করার পরামর্শ প্রদান করি।
মো. অলি উদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই গত বছর আমি আদালতে হাজির হলে বাসায় যাওয়ার পথে কালাম বাহিনী আমার উপর আক্রমণ করেন। তাই একই বছের ২ মার্চ আমি কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি। এখনও আসামিরা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। দফায় দফায় অপরিচিত লোক পাঠায় আমার কাছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন অপরিচিত লোক সাংবাদিক পরিচয়ে আমাকে বলেন, “তুমি মামলা তুলে নাও, নয়তো তোমাকে সরিয়ে ফেলা হবে। তোর লাশ তোমার বউও দেখতে পাবে না । আমি প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি, যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারে। এমনকি তারা মহামান্য আদালত কেউ তোয়াক্কা করছে না। আমি মনে করি এই মূহূর্তে আমার জন্য পুলিশ প্রোটেকশন অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আমি এডভোকেটের মাধ্যমে আদালতে আবেদন জমা দিব।
মাামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আব্দুল কালাম কথা বলতে রাজি হননি।
অথিতি কর্মজীবী সমবায় সমিতির অর্থ সম্পাদক পুর্ব ফালে গ্ৰাম ফজল ফকিরের বাড়ি পিতা-মৃত গোলাম সোবাহানের ছেলে মো. ফজলুল হক কালু (৪৪) গত বছরের ১৫ ই মার্চ রাত আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় ডবলমুরিং থানাদিন আগ্রাবাদ গোলজার কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ফুটপাতে হকারদের কাছ থেকে চাঁদানেয়ার সময় হাতেনাতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ফজলুল হক কালু।