সিলেটের চেঙ্গেরখাল নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের হরিলুট!
ক্রাইম প্রতিবেদক:
সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানা এলাকার জৈনকারকান্দি পাটিমোড়া এলাকার চেঙ্গেরখাল নদী থেকে অবৈধভাবে ছোট বড় শতাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। দীর্ঘদিন ধরে কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের নজরে পড়েনি। ফলে সরকারের রাজস্ব হরিলুট নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জালালাবাদ থানা থেকে এক দুই-তিন কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে ঝৈনকারকান্দি পাঠিমোড়া এলাকা। জালালাবাদ থানার নিকটবর্তী এই এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব হরিলুট হলেও যেন দেখার কেউ নেই। সরজমিনে হাটখলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ঝৈনকারকান্দি পাঠিমোড়া এলাকার নিকটবর্তী চেঙ্গেরখাল নদী ঘুরে এ ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় ইজারা দেয়নি কর্তৃপক্ষ। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে বাণিজ্য করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। স্থানীয়রা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র। বালু তুলতে বাধা দিলে এলাকাবাসীকে এই মহল প্রাণে মারা, হাত পা ভেঙে দেয়ার হুমকী দেয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন দিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলেও স্থানীয় প্রশাসন ওই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার আশপাশের অনেক কৃষকের আবাদি জমি ভেঙে গেছে। গত দুই বছরে ঝৈনকারকান্দি পাঠিমোড়া এলাকার কৃষকদের প্রায় ৩০ শতাংশ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে তাঁর প্রায় ৮০ শতাংশ আবাদি জমি ভাঙনের মুখে রয়েছে। তারা বলেন, ‘কত লেখালেখিও হয় কিন্তু বালু তুলা বন্ধ হয় না।’ এলাকাবাসী সূত্র জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করার পরেও কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি।
এবার আসি অন্যদিকে, তেমনি একটি অভিযোগ এনে সোমবার (১৪ই ফেব্রুয়ারি) সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বারবার নিজের মালিকানা কৃষি ক্ষেতের (৬ কিয়ার) আবাদি জমি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্রের কবল থেকে রক্ষার জন্য লিখিত দরখাস্ত দায়ের করেন হাটখলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ঝৈনকারকান্দি পাঠিমোড়া এলাকার মৃত ফয়জুর রহমানের স্ত্রী অসহায় হাছনা বেগম।
লিখিত দরখাস্ত সুত্রে জানা গেছে- ঝৈনকারকান্দি পাঠিমোড়া এলাকার- মড়ল মিয়ার পুত্র সমুজ মিয়া, মৃত সিকন্দর আলীর পুত্র মোবারব আলী, খালিক মিয়ার পুত্র আশক আলী, আব্দুল জব্বার ও আব্দুল সালাম হাছনা বেগমের মালিকানাধীন সিলেট জেলার ঝৈনকারকান্দি মৌজার ০৭ নং জে.এল এর ২২৬৪ নং দাগের ৬১৪ নং খতিয়ানে সর্বমোট ০৬ কিয়ার আবাদি ফসলি জমি থেকে তার অসহায়ত্ব ও দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে জোরপূর্বক ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটিয়া বিক্রয় করছে। হাছনা বেগম তাদের বাধা দিতে গেলে তাকে ধফায় ধফায় লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে এই ভূমিখেকো চক্র। তবে সর্বশেষ তিনি কোন উপয়ান্তর না পেয়ে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)’র শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।
দরখাস্ত দাখিল করার সঙ্গে সঙ্গে সহকারি ভূমি কমিশনারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ এমনকি প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এই ভূমি খেকো চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলে বিশস্ত সুত্র তা নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সমুজ মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন আর নৌকা দিয়ে মাটি বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান- এখানে যারা বালু উত্তোলন করছে তারা লিজ নিয়ে করছে। আর আমি এসবের সাথে জড়িত নয় বা আমি মাটি বিক্রি করছি না। তাহলে আপনার নাম দরখাস্তে আসে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এটা হয়তো কেউ উদ্দেশ্য প্রনোবীত হয়ে করছে বলে ফোন রেখে দেন তিনি।
এ ব্যাপারে সহকারি ভূমি কমিশনার ফারিয়া সুলতানার ব্যবহৃত সরাকারি নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাজমুল হুদা খানের ব্যবহৃত সরকারি নাম্বারে যোগাযোগ করলে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন- আমারা এই চক্রের সদস্যের কয়েকবার আটক করে থানায় নিয়ে আসা হলে এসিল্যান্ড ও তশিলদার এসে কেমনে কি করে তাদের ছেড়ে দিয়ে চলে যান। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।